স্বদেশ ডেস্ক:
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ বাখমুত দখল করে নিয়েছে এমন দাবি করার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও পোস্টে বাখমুত দখলের দাবি করেন ওয়াগনার প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। সেখানে তাকে তার যোদ্ধাদের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়।
ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অবশ্য এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন, তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে শহরটির অবস্থা এই মূহূর্তে ‘গুরুতর’।
গত অগাস্ট থেকে চলা বাখমুতের লড়াইটি রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার অন্যতম রক্তাক্ত লড়াই বলে মনে করা হয়।
ভাড়াটে যোদ্ধাদের দল ওয়াগনার রাশিয়ার হয়ে বাখমুতে লড়াই করছে- যে লড়াইটি আসলে মস্কোর জন্য খুব একটা কৌশলগত গুরুত্ব নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে সেখানে তাদের হাজারো সৈন্য মারা পড়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে শহরটি রক্ষায়, ফলে এটি দুদেশের মধ্যকার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তাক্ত যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।
রুশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে পুতিনকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে তীব্র লড়াই চলার পর রাশিয়ার এয়ার ফোর্স জেটের সহায়তায় ওয়াগনার গ্রুপ শনিবার বাখমুট ‘স্বাধীন করার অপারেশন’ সম্পন্ন করেছে।
প্রিগোঝিন, যিনি রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার শক্তিশালী যোদ্ধার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি এর আগেও দাবি করেছিলেন যে তার দল বাখমুত বা এর বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে, কিন্তু ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তখনো সেটি অস্বীকার করা হয়।
প্রিগোঝিন ওই সময় শীর্ষ রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছিলেন যে তাকে যথেষ্ট অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়নি।
তিনি যে বাখমুত দখলের সবশেষ ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন, তাতে তিনি বলছেন, এখন আর কেউ সামান্যতমও অস্বীকার করতে পারবে না যে- অন্তত কিছু অংশ হলেও দখল করা হয়নি।
তার পেছনে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, যার মানে শহরের ভেতরে না হলেও আশপাশে যুদ্ধ চলছে।
শনিবার মস্কোর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম যে খবর প্রকাশ করে তাতে ওয়াগনারের দাবির সাথে সুর মেলাতে দেখা যায় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও।
তবে এর কিছু পরেই বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম টেলিগ্রামে ইউক্রেনের ডেপুটি ডিফেন্স মিনিস্টার হানা মালিয়ার বলেন, ‘বাখমুতে তীব্র লড়াই চলছে। পরিস্থিতি গুরুতর। এখন পর্যন্ত আমাদের বাহিনী এই এলাকা এবং প্রাইভেট সেক্টরের কিছু শিল্প ও বাণিজ্য ভবন, কারখানা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।’
পশ্চিমাদের কিছু হিসেব বলছে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার রুশ যোদ্ধা বাখমুতে মারা পড়েছে বা আহত হয়েছে।
একইসাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকেও চড়া মূল্য দিতে হয়েছে এই যুদ্ধে।
এমন কোনো ভবন খুঁজে পাওয়া কঠিন যেটাতে যুদ্ধের চিহ্ন নেই। আর শহরটির সব মানুষ যেন উধাও হয়ে গেছে।
ওয়াগনার এমন এক সময় বাখমুত দখলের দাবি করলো যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদদিমির জেলেনস্কি জাপানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শিল্পনির্ভর দেশগুলোর সংগঠন জি-সেভেনের নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করতে গেছেন।
তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো আরো সহায়তার কথা বলেছে, যার মধ্যে এফ-১৬ ফাইটার জেট পাঠানোর ব্যাপারে গূরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং রাশিয়ার উপর আরো নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এসেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরু করে এবং এর পূর্বাঞ্চল দখল করে নেয়।
ইউক্রেন পরিকল্পনা করছে এসব অঞ্চলে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে দখল হওয়া অঞ্চল পুনরুদ্ধারের। কিন্তু সম্প্রতি জেলেনস্কি বলেন, এজন্য তাদের প্রস্তুত হতে আরো সময় লাগবে।
সূত্র : বিবিসি